‘হারকিউলিস’ এর সন্ধানে গিয়ে মিলল সরকারি গাড়ি ! Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




‘হারকিউলিস’ এর সন্ধানে গিয়ে মিলল সরকারি গাড়ি !

‘হারকিউলিস’ এর সন্ধানে গিয়ে মিলল সরকারি গাড়ি !




অনলাইন ডেস্ক:হারকিউলিসের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশে সন্দেহভাজন ধর্ষকদের হত্যার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন, কে এই হারকিউলিস; যারা ধর্ষকদের হত্যার পর গলায় চিরকুট ঝুলিয়ে রাখছে। যেখানে লেখা হচ্ছে, ‘ধর্ষকের পরিণতি ইহাই। ধর্ষকেরা সাবধান- হারকিউলিস।

ধর্ষণ মামলার আসামিকে হত্যার দায়িত্ব নেওয়া ‘হারকিউলিস’ কে বা কারা, তা এখনো শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পিরোজপুরের যে ধর্ষণ মামলার পর হারকিউলিস আলোচনায় এসেছে, সেই ঘটনায় অভিযোগকারী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি চিকিৎসকেরা।

এদিকে, এই মামলার যে দুই আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়, তাঁদের একজন কাবিত ইসলাম ওরফে রাকিব মোল্লাকে (২০) ঢাকার অদূরে সাভার থেকে এবং আরেকজন ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে সজল জমাদ্দারকে (২৮) চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। উভয় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, যারা তুলে নেয় তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী এই দুজনকে তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করেনি।

তবে ইশতিয়াক ওরফে সজলকে যে গাড়িতে করে তুলে নেওয়া হয়, প্রথম আলোর অনুসন্ধানে সেই গাড়ি শনাক্ত করা গেছে। সাদা রঙের ওই পাজেরো গাড়ি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনীর সদর দপ্তরের নামে নিবন্ধিত। তুলে নেওয়ার আগে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মুঠোফোনের মাধ্যমে দুজনের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছিল, এমন আলামতও পাওয়া গেছে।

ইশতিয়াককে গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামগামী একটি বাস থেকে ধরে নেওয়া হয়। দুই দিন পর তাঁর লাশ পাওয়া যায় ২৪০ কিলোমিটার দূরে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার বেলতলা গ্রামে। লাশের গলায় ঝোলানো ছিল কম্পিউটারে লেখা চিরকুট। যাতে লেখা ছিল, ‘আমি… ধর্ষক, ইহাই আমার পরিনতি।’

কাবিত ইসলামকে সাভারের নবীনগর থেকে তুলে নেওয়া হয় ২৪ জানুয়ারি। এক সপ্তাহ পর তাঁর লাশ পাওয়া যায় নবীনগর থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার আঙ্গারিয়া গ্রামে। তাঁর গলায়ও ঝোলানো ছিল একইভাবে লেখা চিরকুট। তবে এই চিরকুটের শেষে হত্যাকারী হিসেবে লেখা ছিল ‘হারকিউলিস’।

এরপর পৌরাণিক গ্রিক দেবতা হারকিউলিস ব্যাপক আলোচনায় আসে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই এভাবে মানুষ হত্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মানবাধিকারকর্মীরা। ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘এই হারকিউলিস কোথা থেকে এল, কীভাবে এল? আমি মনে করি রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে, পুলিশের দায়িত্ব বের করা, তারা কারা?’ এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। হারকিউলিস নামধারী ধর্ষণে অভিযুক্তদের হত্যাকারী যেই হোক না কেন, তাকে খুঁজে বের করা হবে।’ এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না, জানতে চাইলে গতকাল রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা এখনো কাজ করছেন। কাজ শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এখন দেশের বাইরে। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. নজরুল ইসলাম। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে তুলে নেওয়া এবং পরে লাশ উদ্ধারের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এটা গুরুতর অভিযোগ। রাষ্ট্রকে এখন আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বের করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারা এটা করেছেন, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।

ধর্ষণের আলামত মেলেনি: নিহত ইশতিয়াক ও কাবিত দুজনেরই বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায়। তাঁরা পরস্পর বন্ধু। এক মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১৭ জানুয়ারি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানায় মামলা হয়। ওই ছাত্রীর বাবার করা মামলায় বলা হয়, তাঁরা ১২ জানুয়ারি বেলা ১১টায় ওই ছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন। এর এক সপ্তাহ পর ইশতিয়াক এবং দ্বিতীয় সপ্তাহ পর কাবিতের লাশ পাওয়া যায়।

কিন্তু ওই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষার যে প্রতিবেদন জমা পড়েছে, তাতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত ১৮ জানুয়ারি এ প্রতিবেদন জমা পড়ে। এ বিষয়ে ছাত্রীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের ঘটনার কয়েক দিন পর মামলা হয়েছে। এত দিন পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

ওই ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন পিরোজপুর সদর হাসপাতালের দুই নারী চিকিৎসক। তাঁদের একজন জান্নাতুল মাওয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্ষণ হলে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কোনো না কোনো ইনজুরি পাওয়া যাওয়ার কথা। সেগুলোই আমরা দেখি। পরীক্ষা–নিরীক্ষায় আমরা যা পেয়েছি, তা–ই আদালতের কাছে দিয়েছি।’

ঘটনার পূর্বাপর: ইশতিয়াক একটি মুঠোফোন কোম্পানির টাওয়ার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতেন। বিয়ে করেছেন এক বছরও হয়নি। আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে তুলে নেওয়ার কথা ছিল। আর কাবিত ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র। তাঁর বাবা ঢাকা জজ আদালতে আইনজীবীর সহকারীর কাজ করেন।

কাবিতের নানার বাড়ি আর ওই ছাত্রীর বাড়ি একই সীমানায়। কাবিতের বাবার বাড়ি চার কিলোমিটার দূরে। আর ইশতিয়াকের বাড়ি ওই ছাত্রীর পাশের বাড়ি। ধর্ষণের ঘটনাস্থল যা বলা হয়েছে, সেটা ওই ছাত্রীর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে। মামলায় মাদ্রাসাছাত্রীর বাবা উল্লেখ করেছেন, কাবিত ও তাঁর মেয়ের মধ্যে আগে থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ ছিল।

কাবিতের বাবা আবুল কালাম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাঁর ছেলে গত ২৮ ডিসেম্বর বাড়ি যান। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। খোলার পরপর শিক্ষার্থীরা তেমন আসে না, এমন অজুহাত দিয়ে কাবিত গ্রামের বাড়িতে ছিলেন।

আর ইশতিয়াকের বাবা শাহ আলম জমাদ্দার জানান, ইশতিয়াক ঢাকায় থাকতেন। ১১ জানুয়ারি কর কমিশনের একটি পরীক্ষা দিতে বরিশাল যান। পরীক্ষা শেষে গ্রামের বাড়িতে যান। দীর্ঘদিন পর এসেছেন, তাই কয় দিন বাড়িতে থাকবেন বলে রয়ে যান।

দুজনের বাবা বলেছেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কি না, তাঁরা জানেন না। তবে কাবিতের মামার সঙ্গে ওই ছাত্রীর বাবার জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। অবশ্য ছাত্রীর বাবা বলেছেন, জমিজমার বিরোধের ঘটনা ঠিক নয়।

বাস থেকে নামানো হয় ইশতিয়াককে:

মামলার পরদিন ১৮ জানুয়ারি ভান্ডারিয়া থেকে ঢাকায় চলে আসেন ইশতিয়াক। ওঠেন তাঁর বাড্ডার হাজীপাড়ার মেসে। মিরপুরের টোলারবাগে শ্বশুরের বাসা। তাঁর স্ত্রী সামসুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ইশতিয়াক ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় টোলারবাগে তাঁদের বাসায় আসেন। সেখান থেকে ২২ জানুয়ারি সকালে বের হন চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশে। বাসে ওঠার পর ইশতিয়াকের সঙ্গে কয়েকবার ফোনে কথা হয় সামসুন্নাহারের। সন্ধ্যা সাতটার পর তিনি আর ফোনে ইশতিয়াককে পাননি।

ইশতিয়াকের বাড্ডার মেসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল পাশের মেসের নূর ইসলামের। প্রথম আলোকে নূর ইসলাম বলেন, সবুজ নামে স্থানীয় এক ভ্যানচালক ২২ জানুয়ারি ইশতিয়াককে চট্টগ্রামের বাসে তুলে দেন।

এরপর কথা হয় ভ্যানচালক সবুজের সঙ্গে। তিনি জানান, ঢাকার নদ্দায় এনা পরিবহনের বিকেল চারটার বাসে ইশতিয়াককে তুলে দিয়েছিলেন। এরপর দুবার ইশতিয়াকের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়। শেষবার ইশতিয়াক বলেছিলেন, বাস কুমিল্লা সেনানিবাস পার হচ্ছে। পরে রাতে তাঁর ফোন বন্ধ পান সবুজ।

নদ্দায় এনা বাস কাউন্টার থেকে জানা যায়, সেখান থেকে বিকেল চারটায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে যে বাসটি ছেড়ে যায়, সেটি মহাখালী মূল কাউন্টার থেকে বেলা সাড়ে তিনটায় ছেড়ে আসে। মহাখালী কাউন্টারে গেলে তাঁরা রেজিস্টার খাতা দেখে ২২ জানুয়ারি বেলা সাড়ে তিনটায় যে বাসটি ছেড়ে গিয়েছিল তার নম্বর এবং চালক ও সুপারভাইজারের নাম জানান। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাঁদের নাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলো না।

সুপারভাইজার প্রথম আলোকে বলেন, সীতাকুণ্ডের বড় দারোগারহাট এলাকায় সেদিন গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। রাস্তার পাশে একটি সাদা রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তিনজন গাড়ি থামাচ্ছিলেন। তাঁদের বাসটি কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর বাসটি বাড়বকুণ্ড বাজার এলাকায় পৌঁছালে তখন সেই সাদা গাড়িটি দ্রুতবেগে এসে তাঁদের বাস থামানোর জন্য হেডলাইটে সংকেত (ডিপার) দিতে থাকে। বাস দাঁড় করালে ওই গাড়ি থেকে তিনজন বেরিয়ে আসেন। তাঁরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক বলে পরিচয় দেন।

সুপারভাইজার জানান, সাধারণ পোশাকের ওই ব্যক্তিরা গাড়িতে ওঠার পর একজন তাঁর মুঠোফোনে থাকা ছবির সঙ্গে যাত্রীদের চেহারা মেলাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তাঁরা এক যাত্রীকে ধরে নিয়ে যান।

এই প্রতিবেদক ইশতিয়াকের ছবি দেখালে সুপারভাইজার নিশ্চিত করেন, এই ব্যক্তিকেই ওই দিন বাস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

পরে কথা হয় গাড়ির চালকের সঙ্গে। তিনিও একই তথ্য দেন। চালক বলেন, ওই যাত্রীকে নিয়ে সাদা রঙের গাড়িটি যখন চলে যাচ্ছিল, তখন তিনি গাড়িটির একটি ছবি মুঠোফোনে তুলে রেখেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে ওই ছবি নিয়ে দেখা যায়, এটি সরকারি মালিকানাধীন প্রগতিতে সংযোজিত একটি সাদা রঙের পাজেরো গাড়ি। গাড়ির নম্বর ধরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়ির মালিকানার জায়গায় লেখা রয়েছে ‘গভট ডিপার্টমেন্ট’ (সরকারি বিভাগ)। আর ঠিকানার ঘরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনীর সদর দপ্তরের কথা লেখা।

বাসের চালক ও সুপারভাইজারের বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত হতে ওই দিন বাসের যাত্রীদের তালিকা সংগ্রহ করে মুঠোফোন নম্বর ধরে যোগাযোগ করা হয়। একজন যাত্রী (ফেনী কলেজের ছাত্র বলে জানিয়েছেন) প্রথম আলোকে বলেন, ২২ জানুয়ারি তাঁদের বাস থেকে একজনকে নামিয়ে একটি সাদা গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়াটা তিনি দেখেছেন।

কাবিতকে তুলে নিতে যায় দুটি গাড়ি:

মামলা হওয়ার পর ১৮ জানুয়ারি কাবিত ইসলাম ভান্ডারিয়া থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাঁদের ভাড়া বাসায় চলে আসেন। পরদিন সাভারের নবীনগরে এক বন্ধুর বাসায় চলে যান। তাঁর বাবা আবুল কালাম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণ মামলা নিয়ে হইচই হওয়ার কারণে তিনিও ছেলেকে কিছুদিন বাসার বাইরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। নবীনগরের এক বন্ধুর কাছে যাওয়ার পর প্রতিদিনই মুঠোফোনে ছেলের সঙ্গে কথা হতো আবুল কালামের। সর্বশেষ ২৪ জানুয়ারি রাত ৯টা ৫০ মিনিটে কথা হয়। এরপর ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁর এক বন্ধু ফোন করে জানান, দুটি হাইয়েস মাইক্রোবাস (একটি সাদা, একটি কালো) এসে কাবিতকে তুলে নিয়ে গেছে।

কাবিতের ওই বন্ধু প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে এই প্রতিবেদকের সামনেই কাবিতের বাবা মুঠোফোনে (স্পিকার অন করে) তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। কাবিতের ওই বন্ধু বলেন, ২৫ জানুয়ারি তিনি ও কাবিত নবীনগরের নিরিবিলি সড়কের টাওয়ার নামক এলাকার একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় দুটো মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়। সামনের গাড়ি থেকে চারজন নেমে তাঁদের দুজনকে আটক করেন। এরপর তাঁদের পেছনের গাড়ির পাশে নিয়ে গিয়ে একজন জানতে চান ‘এ, না ও?’। গাড়ির ভেতর থেকে একজন কাবিতকে দেখান। তখন কাবিতকে তুলে নিয়ে গাড়ি দুটি চলে যায়।

মুঠোফোনে অবস্থান শনাক্ত করা হয়:

কাবিতের মুঠোফোনের কল তালিকা সংগ্রহ করেছেন তাঁর বাবা আবুল কালাম মোল্লা। তাতে দেখা যায়, ২৪ জানুয়ারি রাত ৯টা ১০ মিনিটে কাবিতের মুঠোফোনে সর্বশেষ তাঁর বাবা ফোন দিয়েছিলেন। ওই দিন রাত ১০টা ১৪ মিনিট থেকে ২৭ মিনিটের মধ্যে কাবিতের ফোনে তিনটি নম্বর থেকে চারটি এসএমএস আসে। নম্বর তিনটিতে ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
একইভাবে ইশতিয়াকের কল তালিকায়ও দেখা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে বাসটি যখন কুমিল্লার বিশ্বরোড এলাকায় ছিল, তখন থেকে তাঁর ফোনে একটি নম্বর থেকে একের পর এক এসএমএস পাঠানো শুরু হয়। তাঁকে বাস থেকে নামিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এসএমএস পাঠানো অব্যাহত ছিল।

অপরাধ তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান, কারও সুনির্দিষ্ট অবস্থান শনাক্ত করতে এ ধরনের এসএমএস পাঠানো হয়, যা ফোনের মালিক দেখতে পান না। এতে কিছু লেখা থাকে না। তবে কল তালিকায় এর অস্তিত্ব রয়ে যায়।

এভাবে কারও অবস্থান শনাক্তের সামর্থ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া আর কারও আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম) রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের নির্দিষ্ট সংস্থা থেকে এটা করা হয়। সেখান থেকে সাহায্য নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটা ব্যবহার করে। সরকারি বাহিনী ছাড়া এটা অন্য কেউ করতে পারে না।

এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযুক্ত দুই যুবককে হত্যার আগে যদি সত্যিই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সেটা ভীষণ শঙ্কার বিষয়। ঘটনাটি যদি তারা খতিয়ে না দেখে, তাহলে এটা পরিকল্পিত কি না, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। যাদের হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারাই যদি আইনবহির্ভূত কাজ করে, তাহলে আমরা যাব কোথায়? সূত্র: প্রথম আলো

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD